ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে চির বিদায় জানান – গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন প্রায় অনেকেই। নিজের কিছু ভুল থেকেই এইম সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা এক সময় মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। এর থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ওষুধ সেবন করেন। যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে এই সমস্যার হাত থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক গ্যাস বা অম্বলকে কীভাবে এড়ানো যায় তার কিছু সহজ উপায়-




১। ঢিলেঢালা পোশাক- খুব টাইট জিন্স বা কোমরের বেল্ট বেশি টাইট করে বাঁধবেন না। কারণ টাইট বেল্ট পেটে চাপ দেয়, যার ফলে টক ঢেকুর উঠতে পারে। কাজেই একটু আরামদায়ক বা একটু ঢিলে কাপড়-চোপড় পরাই ভালো।
২। নিয়মিত হাঁটাচলা করুন- আমরা সবাই জানি ‘হাঁটা-চলার কোনো বিকল্প নেই’। অতিরিক্ত ওজনের কারণে পেটে চাপ পড়ে এবং হাঁটাচলা না করায় মলত্যাগ করার পথে বাঁধা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পেটে খাবার জমে থাকা মানেই অস্বস্তি বোধ এবং সে কারণে ওজন কমানো বা ওজন ঠিক রাখাও সম্ভব হয় না। ব্যায়াম এবং হাঁটাচলা করলে শরীর হালকা থাকে, অন্ত্রও থাকে সক্রিয় আর গ্যাসও হয় কম।




৩। বালিশটা একটু উঁচু করে ঘুমান- গ্যাসট্রিক বা অম্বলের সমস্যা সাধারণত রাতে বেলায় হয়। তাই বালিশটা একটু উঁচু করে এবং শরীরের ওপরের দিকটাও একটু উঁচুতে তুলে ঘুমান। এতে গ্যাসট্রিক অ্যাসিড ওপরে উঠতে পারে না। বাঁদিকে কাত হয়ে ঘুমালেও পেটে চাপ কম পড়ে। তাছাড়া রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে খান। এতে খাবার হজম করতে আর কোনো সমস্যা হবে না।
৪। তিন বেলার খাবার ছয় বেলায় খান- তিন বেলার খাবারকে ভাগ করে ছয়বার খান। তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ঝাল, চর্বি, মসলা, মিষ্টি, অর্থাৎ যেসব খাবার হজম করতে সমস্যা হয়, সেগুলো খাবার তালিকা থেকে আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।




৫। খাবারের তালিকায় রাখুন মাছ, অল্প মাংস, সবজি, আলু ইত্যাদি। এছাড়া খালি পেটে ফলের রস বা টক জাতীয় খাবার একেবারেই নয়। খাবার উপভোগ করুন পরিমাণে অল্প খাবার একটু ধীরে ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খান। দুপুরে খাওয়ার পর পরই ঘুমানো উচিত নয়, কারণ এতে খাবার আবার পাকস্থলীতে ফিরে আসতে পারে। খাওয়ার পর একটু হাঁটুন। এতে খাবার হজম এবং মলত্যাগে সহায়ক হবে।
৬। বুঝে পান করুন- পিপাসা মেটাতে পানি এবং হালকা চা পান করুন। দিনে কম পক্ষে দুই লিটার পানি পান করুন। এতে খাবার পাকস্থলীতে ভালো করে মিশে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। কফি বা অ্যালকোহল যতটা সম্ভব কম পান করুন।




৭। আঁশযুক্ত খাবার- ডাক্তারি ভাষায় টক খাবার বলতে বোঝায় মুরগির মাংস, মাছ, ভাত, মসুরের ডাল ইত্যাদি। এ ধরনের খাবার খাওয়ার পর অ্যাসিড হতে পারে। তাই আলু, রুটি, সিম, মটরশুটি, মুগের ডাল, কলাইয়ের ডাল ইত্যাদি খাবার ‘টক’ খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অম্বলের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এছাড়া প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সামান্য আলু সিদ্ধ বা তরকারি রাখুন। আঁশযুক্ত খাবারের কথা অবশ্যই মাথায় রাখুন।
৮। স্ট্রেসকে দূরে রাখুন- কোলন ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়োর্গেন স্ল্যুইটারের মতে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সঙ্গে রয়েছে পেটের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাই যে কোনো সংঘাত এড়িয়ে যতটা সম্ভব ‘স্ট্রেস’ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। হালকা খাবার, যথেষ্ট হাঁটাচলা, কিছুটা বিশ্রাম– এভাবেই পেট বা অন্ত্রকে রক্ষা করএ গ্যাসট্রিককে প্রতিরোধ করতে পারেন।




৯। ধূমপান নয়- স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ফলে পেটে অ্যাসিড প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্ট্রেসের কারণে অনেকে ধূমপান করেন। কিন্তু নিকোটিন অন্ত্রের খাবার মলদ্বারের রাস্তায় যে পথ দিয়ে যায়, সেটিকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এছাড়া স্ট্রেস হরমোন হজম শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধার কারণে পেটে অ্যাসিড উৎপাদন হয়, কাজেই আর ধূমপান নয়!




১০। গ্যাসট্রিককে জয় করুন- হাঁপানি, হৃদরোগ, জন্ম নিরোধ ট্যাবলেট বা ব্যথার ওষুধ সেবন থেকেও অম্বল বা গ্যাসট্রিক হতে পারে। তাই যারা এরকম ওষুধ সেবন করেন তাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখনো অম্বল হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারো যদি হঠাৎ করে এ সমস্যা দেখা দেয়, বুঝতে হবে যে হয় অতিরিক্ত খাওয়া বা দেরিতে খাওয়া বা ভুল খাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।







